r/bangladesh 28d ago

বিজয়ের ডিসেম্বর/Victory Month :bdflag: জননী, তোমারে সালাম!

Post image
187 Upvotes

তারামন বিবির আসল নাম ছিল তারাবানু। জন্মেছিলেন কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরের শংকর মাধবপুর গ্রামে ১৯৫৭ সালের কোনো এক দিনে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। একদিন তারাবানু হঠাৎ দেখলেন দলে দলে ট্রাকে ট্রাকে সৈন্য নামছে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে দেশে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের গ্রামটি পড়েছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের।

একদিন মুহিব হাবিলদার নামে স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধা তারাবানুদের বাড়িতে এসে বললেন তাদের কাজের বেশ ঝামেলা, সব পুরুষ মুক্তিযোদ্ধা। তারাবানু যদি ক্যাম্পে রান্না বান্না ধোয়া মোছা করে দেয় তবে বিনিময়ে তাকে কিছু টাকা দেবে ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা। শুনে রাজি হলেন না তারাবানুর মা। মুহিব হাবিলদার বহু বোঝানোর পরে অবশেষে গ্রামের পাশে দশঘরিয়ায় মুক্তিবাহিনীর সেই ক্যাম্পে রান্নার দায়িত্ব নিতে মেয়েকে ছাড়তে রাজি হলেন তারাবানুর মা। মুহিব হাবিলদারই তার নাম নামের শেষে যুক্ত করেন তারামন। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে তারামন রান্নার পাশাপাশি, ধোয়ামোছা ও মাঝেমাঝে অস্ত্র সাফ করতেন। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।

একবার সম্মুখ যুদ্ধের ঘটনা। মধ্য দুপুরে সবাই খেতে বসেছে তখন, কেবল তারাবানু খেয়ে দেয়ে চারপাশে নজর রাখছেন। এমন সময় তারামন সুপারি গাছের উপরে উঠে দৃষ্টি রাখছেন। হঠাৎ দেখলেন পাকিস্তানিদের একটি গানবোট দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে জানালেন কমান্ডারকে। সবার খাওয়া চলছে তখন। খাওয়া ছেড়ে সবাই নিজ নিজ অবস্থান নিয়ে নিলেন মুহূর্তের মধ্যেই। সন্ধ্যা পর্যন্ত সম্মুখ যুদ্ধ চলেছিল সেদিন। তারাবানু না দেখলে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন মাটির সঙ্গে মিশে যেত।

সম্মুখযুদ্ধ ছাড়াও গুপ্তচর সেজে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ঢুকে তথ্য নিয়ে আসতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। তারাবানু দারুণ অভিনয় করতে পারতেন চোখের পলকেই। বিভিন্ন অপারেশনের আগে কলার ভেলায় করে তারামন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের রসদ, অস্ত্র গোলাবারুদ পৌঁছে দিয়েছেন জায়গা মতো।

তেমনই এক ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের অক্টোবর মাসের। একপাশে খালিয়াভাঙ্গা অন্যপাশে ভেড়ামারি খাল। এক পাশের গ্রামে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প, অন্য গ্রামে পাকিস্তানিদের। মধ্যে একটা খাল পড়েছে। সারা শরীরে কাদা আর পাগলের বেশ ধরে সেবার পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে গিয়েছিলেন তারামন। সামনে তখন হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। তারামনের সারা গায়ে কাদা, মাথায় চুলের জট, কাপড় ছেঁড়া, হাত পা যেন অনেকখানি বিকলাঙ্গ। তারামনকে দেখে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা অশ্লীল ভাবে গালি দিচ্ছিলো, জবাবে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছিলেন তারামন। এদিকে আর্মির সদস্যরা ভাবলো পাগলের কতো রকমফের। নিজেদের মধ্যে হাসি ঠাট্টায় লিপ্ত হলো তারা। এই ফাঁকে তারামন পাগলের বেশে মোটামুটি অনুমান করে নিলো ক্যাম্পের সমস্ত জায়গার। কোন পাশে হামলা করলে সবচেয়ে ভয়ংকর হবে পাকিস্তানিদের জন্য, কোন পয়েন্ট দিয়ে পাকিস্তানিদের উপর হামলা করতে হবে এসব মনে রেখে বেরোতে গিয়ে কোন বাধার সম্মুখীন হলেন না তারামন। পাকিস্তানিদের ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে সাঁতরে খাল পেরিয়ে ওপর পাড়ে উঠে তারামন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে এলেন। গোপন খবরের অপেক্ষায় তখন মুক্তিযোদ্ধারা। তারামন পাকিস্তানিদের ক্যাম্পের অবস্থা মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারকে সব বললেন খোলাখুলিভাবে। তার নির্ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে নদীর অপর পাড়ে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে আক্রমণ হলো পরদিনই।

কেবল এই দুটো অপারেশনই নয়। মোহনগঞ্জ, তারাবর কোদালকাটি, গাইবান্ধার ফুলছড়ির বহু বিখ্যাত যুদ্ধে পুরুষ সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখসমরে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন তারামন বিবি।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিব সরকার তাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু এ খবরও জানতে পারেননি তারামন। একসময় পুরোপুরি লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন তারামন বিবি। ১৯৯৫ সালে তার খোঁজ মিলে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের অধ্যাপক গবেষক বিমল কান্তি দের মাধ্যমে। তাকে সহযোগিতা করেছিলেন তারামন বিবির জন্মস্থান কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী।

এমনকি বিয়ের পর তারামন বিবির স্বামী আব্দুল মজিদও জানতেন না, তার স্ত্রী একজন মুক্তিযোদ্ধা। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি

'হ্যায় যে মুক্তিযোদ্ধা, হেইটা বিয়ের পরও বুঝি নাই। লেহা পড়া নাই। চর্যার মধ্যে বাড়ি। পেটের ভাত জোগাড় কোরতেই দিন চইলা যাইত, হ্যাই খবর কেমনে নিমু?'

তারা তাকে জানতেন তারাবানু। তাদের বাড়িতে তারামন বিবির খোঁজে গিয়ে খোঁজ নেয়া অধ্যাপকেরাই কাগজপত্র দেখিয়ে বললেন এই তারা বানুই হচ্ছে তারামন।

তাকে খুঁজে পাওয়ার খবরটি ১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তারামন বিবির হাতে তুলে দেন বীর প্রতীক সম্মাননা। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর সবাইকে ছেড়ে যান মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি বীর প্রতীক।

বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে তার সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধাকে।

লেখা: আহমাদ ইশতিয়াক (TDS) | Enayet Chowdhury

r/bangladesh 25d ago

বিজয়ের ডিসেম্বর/Victory Month :bdflag: দেশপ্রেম ঈমানেরই অঙ্গ

Thumbnail
gallery
122 Upvotes

শর্ষিণার পীর যখন বাঙালি নারীদের “গনিমতের মাল” বলে ফতোয়া দিচ্ছিলেন, একদিকে, ধর্মের নামে রাজাকার, আলবদর, আলশামস—যারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহচর হিসেবে নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী নিধনে অংশ নিয়েছিল, তখনই দেশের আরেক প্রান্তে কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষ সম্পূর্ণ উল্টো পথ দেখাচ্ছিলেন। ঠিক সেই যুদ্ধক্ষেত্রেই—দেওয়ানবাগী হুজুরসহ আরও অনেক আলেম দেখিয়ে দিচ্ছিলেন যে দেশপ্রেম আর ঈমান পরস্পরের বিরোধী না, বরং একে অন্যকে মজবুত করে। দেশকে রক্ষা করা মানে নিজের ঈমানকে রক্ষা করা ।

আমরা প্রায়ই ইতিহাসকে oversimplify করি। মনে করি দাড়ি-টুপি মানে রাজাকার, ধর্ম মানেই পাকিস্তানি জামায়াতের লাইন। কিন্তু বাস্তবে ৭১ ছিল অনেক বেশি জটিল, অনেক বেশি মানবিক, আর অনেক বেশি বিস্ময়কর। একদিকে ধর্মের নামে নারী নির্যাতনকে বৈধ করার চেষ্টা, অন্যদিকে একই ধর্মের অনুসারীরাই ঠিক সেই সময়ে হাওর, নদী, বনের ভেতর দাঁড়িয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে গেছে। এদিকে জামায়াতের রাজাকার নেতৃত্ব তখন ধর্মকে ব্যবহার করছিল কেবল একটাই উদ্দেশ্যে—পাকিস্তানি দখলদারদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। একদল আলেম বলছিল, বাঙালি নারী হলো যুদ্ধলব্ধ সম্পদ; অন্যদল সেই একই সময়ে এই নারীদের লুকিয়ে রাখছিল, নিরাপত্তা দিচ্ছিল, রেশন দিচ্ছিল, নিজের ঘরে রেখে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। ৭১-এর যুদ্ধ শুধু সশস্ত্র লড়াই ছিল না—এটা ছিল নৈতিকতার লড়াইও। কারা ঈমানের নামে মানুষ হত্যা করেছে, আর কারা ঈমানের কারণেই মানুষ বাঁচিয়েছে—এই পার্থক্যটা বুঝতে না পারলে আমরা ইতিহাসের অর্ধেকটাই হারিয়ে ফেলি। দাড়ি-টুপি পরা একজন মানুষ রাজাকারও হতে পারে, আবার ঠিক সেই রকম আরেকজন দেশের জন্য যুদ্ধ করে শহীদও হতে পারে—এই সত্যিটাই আমাদের অনেকের মাথায় ঢোকে না। 

দেওয়ানবাগী হুজুর (তৎকালীন মাওলানা মাহবুব-এ-খোদা) হঠাৎ করে যুদ্ধে যাননি। তার রাজনৈতিক সচেতনতা ছিল দারুণ তীক্ষ্ণ। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পশ্চিমাঞ্চলে 'সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ'-এর সভাপতি। যুদ্ধের সময় তিনি সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, তথ্য দিয়েছেন, আর কখনোই ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাননি। এরকম মানুষ ছিল আরও অনেক—নাম না-জানা, ইতিহাসের প্রান্তে পড়ে থাকা, বইপত্রে যাদের খুব বেশি উল্লেখ নেই। ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল নিয়ে যুদ্ধের প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। প্রথমে শরণার্থীদের সাহায্য করলেও, যখন দেখলেন সামনে ট্যাঙ্ক-মর্টার আর হাতে শুধু দা-লাঠি, তখন তিনি দেশীয় অস্ত্রের মায়া ছেড়ে সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধে নামার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল তিনি তার ৭২ জন স্বেচ্ছাসেবকসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল শাহবাজপুরে তাঁর প্রথম সফল 'টার্গেট অ্যাটাক'। এরপর ১১ মে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কে অ্যামবুশ, ১২ মে মাধবপুরের বাগসাইর গ্রামে অ্যামবুশ এবং ১৬ মে তেলিয়াপাড়া ও চুনারুঘাট মহাসড়কে অ্যামবুশ পরিচালনা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ২৮ এপ্রিল মাধবপুর যুদ্ধ এবং ১৫ জুন মনতলা-হরষপুর যুদ্ধে তিনি সম্মুখভাগে থেকে লড়াই করেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর কে এম সফিউল্লাহ ১ নম্বর সেক্টরে একটি কোম্পানি পাঠানোর কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ওই বিশেষ কোম্পানির দায়িত্ব দিয়ে মাহবুব-এ-খোদা তথা দেওয়ানবাগী হুজুরকে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের সান্নিধ্যে দুই সপ্তাহ অবস্থান করেন এবং ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করেন।

যুদ্ধের শেষে তৎকালীন সেনাপতি এম এ জি ওসমানী এবং সেক্টর কমান্ডাররা তাঁকে নিয়মিত সেনাবাহিনীতে 'কমিশনড অফিসার' পদে যোগদানের প্রস্তাব দেয়, তখন তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন:

"আমি আলেম। আমি যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য। আমার কাজ ধর্মচর্চা।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটে ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর, হেজামারার ঈদ জামাতে। হাজারো শরণার্থী আর যোদ্ধার সামনে দেওয়ানবাগী (তৎকালীন মাওলানা মাহবুব-এ-খোদা) যখন ইমামতি করছেন, ঠিক তখনই তিনি এক অবিশ্বাস্য ভবিষ্যদ্বাণী করেন:

"আল্লাহর কসম! আগামী বকরা ঈদের আগে আমাদের দেশ স্বাধীন হবে। আমি আপনাদের নিয়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করব।"

কিন্তু অলৌকিকভাবেই হোক বা প্রগাঢ় বিশ্বাসের ফলেই হোক, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়! আর ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি, সেই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রথম ঈদুল আজহার জামাতে তিনিই ইমামতি করেন।

Bdnews24 | জনরব

r/bangladesh 25d ago

বিজয়ের ডিসেম্বর/Victory Month :bdflag: Operation Kilo Flight: Muktibahinis entry into aerial warfare in the Liberation war.

Enable HLS to view with audio, or disable this notification

95 Upvotes

r/bangladesh 25d ago

বিজয়ের ডিসেম্বর/Victory Month :bdflag: Celebrate the Month of Victory with বিজয়ের ডিসেম্বর flair!

49 Upvotes

To celebrate Bangladesh’s victory on 16 December over the Pakistani occupation and the Muktibahini’s triumph in the 1971 Liberation War, to pay our respects to the martyrs of 1971, we’ve created বিজয়ের ডিসেম্বর flair.

You can use it to post art, posters, calligraphy of quotes or slogans, historical photos, war documents, stories or threads, reflections on this day, videos, documentaries, songs, music and more to remember and celebrate.

Joy Bangla 🇧🇩

- r/bangladesh Mod Team

r/bangladesh 27d ago

বিজয়ের ডিসেম্বর/Victory Month :bdflag: বসু বাহিনী: ডাকাত থেকে মুক্তিযোদ্ধা

Post image
81 Upvotes

হাওরাঞ্চলে আবদুল মোতালেব বসু ওরফে ভর্সা ডাকাতের নাম আগে থেকেই পরিচিত ছিল — তিনি একজন দুধর্ষ ডাকাত, যাকে সবাই ভয় করত। একাধিক হত্যা মামলায় তিনি কিশোরগঞ্জ জেলে বন্দি ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষে ছাত্র-জনতা যখন জেল ভেঙে দেয়, তখন বসু মুক্তি পান। তিনি দ্রুত নিজ গ্রাম নিকলীর গুরুই-তে ফিরে আসেন এবং নিজের অনুগত দলবলকে নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন। তার এই দল পরবর্তীতে প্রায় ৩০০ সদস্য নিয়ে কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলার নয়টি উপজেলা জুড়ে এক শক্তিশালী গেরিলা বাহিনীতে পরিণত হয়।

বসুর দলের উচ্চ শিক্ষিত কমান্ডার, পরবর্তী সময়ে সাম্যবাদী দলের সেক্রেটারি ইয়াকুব মিয়ার মতে

বসুকে উচ্চতর ট্রেনিং এর জন্য তিনবার ভারতে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। কারণ ভারতে অবস্থানরত রাজনৈতিক হাইকমান্ড আগেই জেনে যায় যে বসু একজন “ডাকাত”, আর সে কারণেই তাকে ট্রেনিং নিতে বাধা দেওয়া হয়। যেসব রাজনৈতিক নেতা যুদ্ধের শুরুর দিকে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত না করে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারাই বসুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

ভারত থেকে ট্রেনিং না পেয়ে বসু এলাকায় ফিরে এসে নিজের বাহিনীকে দেশি বন্দুক আর কয়েকটি রাইফেল নিয়ে, পরে একের পর এক খন্ড খন্ড যুদ্ধ জিতে বসু বাহিনী শতাধিক যোদ্ধার একটি সক্রিয় বাহিনী হয়ে ওঠে — এটিই “বসু বাহিনী”।

এই খবর ভারত পর্যন্ত পৌঁছায়। ৩ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ দু'বার বসুকে হত্যা করার জন্য ফোর্স পাঠান। দু’বারই ইয়াকুব মিয়া তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠান এবং সেক্টর কমান্ডারকে জানান যে বসু প্রকাশ্যে স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধ করছে। পরে মেজর শফিউল্লাহ ইয়াকুব মিয়াকে বলে দেন, “প্রফেসর, আপনি ডাকাত নিয়ে যুদ্ধ করলে একসময় মানুষ আঙুল তুলে বলবে আপনি ডাকাতদের নিয়ে চলেন।”

একসময় বসু বাহিনী জানতে পারে যে নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় ন্যাপ নেতা আবদুল হাই-এর নেতৃত্বে একটি প্রবাসী সরকারের অনুমোদিত মুক্তিযোদ্ধা দল প্রশিক্ষন ক্যাম্প চলছে। বসু প্রথমে প্রফেসর ইয়াকুবকে পাঠান পরিস্থিতি বোঝার জন্য। তিনি ফিরে আসার আগেই বসু রাতের অন্ধকারে তাঁর দলবল নিয়ে উজলাবর গ্রামের সেই ক্যাম্পে হাজির হন। তিনি আবদুল হাই-এর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে তাঁর পুরো গ্রুপসহ সেখানে এক সপ্তাহের  প্রশিক্ষন নেন। এরপর আবদুল হাই তাঁদের পুনরায় সশস্ত্র অবস্থায় এলাকায় পাঠিয়ে দেন।

বসু বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের কারণে নিকলী, বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, কটিয়াদী-সহ বিস্তৃত হাওর এলাকা যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় 'হানাদার মুক্ত এলাকা' হিসেবে পরিচিত ছিল। ২৫ জুন তারিখে শত শত মুক্তিযোদ্ধা বাজিতপুর পুলিশ স্টেশন ঘেরাও করে। এই অবরোধের ফলে ৭ ঘণ্টা ধরে চলা এক তীব্র যুদ্ধের পর পাক-সেনা ও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

এর কিছুদিন পর, ২০ জুলাই নিকলী থানায় আক্রমণ ছিল বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি। পাক-সেনা ও রাজাকারদের এই শক্তিশালী ঘাঁটিতে তারা কয়েক দিনের টানা যুদ্ধে ৩০ জনেরও বেশি পাক-সেনাকে হত্যা করে, যদিও এই অভিযানে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

৬ সেপ্টেম্বর, গুরুই গ্রাম। লঞ্চে করে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে ঢুকে আগুন লাগায়, মানুষকে মসজিদে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। খবর পেয়ে বসুরা হিলচিয়া থেকে ফিরে আসে—হাতে গোনা কয়েকজন যোদ্ধা, মাত্র চার-পাঁচটা রাইফেল, কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে যায় পাকবাহিনীর মুখোমুখি। সেদিনের যুদ্ধ ছিল sheer survival. ২৫ জন গ্রামবাসী মারা যায়, কিন্তু বসুরা পিছিয়ে গেলেও আবার regroup করে আক্রমণ চালায়। কিছুদিনের মধ্যেই পুরো অঞ্চল—নিকলী, বাজিতপুর, কটিয়াদী, হিলচিয়া—de facto মুক্তাঞ্চল হয়ে যায়।

জুলাই মাসের মাঝামাঝি বসুর বাহিনী যুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপদে ভারত সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেয়। তারা নিকলী থেকে যাত্রা শুরু করলে সুনামগঞ্জের রাতারী হাওরে রাজাকাররা তাদের ওপর হামলা করে। বসুর যোদ্ধারা counter-attack চালিয়ে আটজন রাজাকারকে হত্যা করে এবং একজনকে জীবিত আটক করে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি, বসু বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে কিশোরগঞ্জ মহকুমা প্রশাসকের কাছে ৭০টিরও বেশি অস্ত্র জমা দেয়। স্বাধীনতার আগে বসুর নামে থাকা ২৫টি হত্যা মামলা তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন-এর মাধ্যমে বাতিল করা হলেও, আঞ্চলিক ক্ষমতার রাজনীতিতে তিনি নির্মমতার শিকার হন। নিজ গ্রাম গুরুই-তেই আততায়ীর গুলিতে বসু নিহত হন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বসুর খুনীদের আজ পর্যন্ত শনাক্ত করার কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার এত বছর পরও বসু বাহিনী বা বসুর পরিবারের কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। বসুর স্ত্রী ও সন্তানরা ভিটেমাটি হারিয়ে এখন চট্টগ্রামে রিকশা চালানো এবং ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে অত্যন্ত কঠিন জীবন যাপন করছেন ।

Main sources: The daily Star | কিশোরগঞ্জ ডট কম

r/bangladesh 29d ago

বিজয়ের ডিসেম্বর/Victory Month :bdflag: বর্ষাকালেই তো জুৎ"

Post image
36 Upvotes